Skip to main content
Loading Ad...
Free Study Help

সূরা তীন বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ | সূরা তীন এর তাফসীর | সূরা তীন তেলাওয়াত

By Munna vai Published: October 9, 2025
Views:
সূরা তীন বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ | সূরা তীন এর তাফসীর | সূরা তীন তেলাওয়াত
Related Posts
Loading Ad...

Table of Contents

 

সূরা তীন বাংলা উচ্চারণ, সূরা তীন বাংলা অনুবাদ, সূরা তীন, সূরা তীন এর তাফসীর, সূরা তীন বাংলা অনুবাদ সহ, সূরা তীন তেলাওয়াত, সূরা আত তীন।

 

 আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। আমার দ্বীনী ভাই ও বোনেরা আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রিয়  ভাই ও বোনেরা আজ আমি আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম:- সূরা তীন বাংলা উচ্চারণ, সূরা তীন বাংলা অনুবাদ, সূরা তীন, সূরা তীন এর তাফসীর, সূরা তীন বাংলা অনুবাদ সহ, সূরা তীন তেলাওয়াত, সূরা আত তীন।তো দেরি না করে আসুন আমরা পড়া শুরু।

 

 

সূরা তীন বাংলা উচ্চারণ | সূরা তীন বাংলা অনুবাদ | সূরা তীন 

 
 
 بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
 
 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
 
 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু
 
 
[1] وَالتّينِ وَالزَّيتونِ
 
[1] অত্তীনি অয্যাইতূনি।
 
[1] শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের,
 
 
[2] وَطورِ سينينَ
 
[2] অতুরি সীনীনা।
 
[2] এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
 
 
[3] وَهٰذَا البَلَدِ الأَمينِ
 
[3] অহা-যাল্ বালাদিল্ আমীন।
 
[3] এবং এই নিরাপদ নগরীর।
 
 
[4] لَقَد خَلَقنَا الإِنسٰنَ فى أَحسَنِ تَقويمٍ
 
[4] লাক্বদ্ খলাকনাল্ ইন্সা-না ফী আহ্সানি তাক্বওয়ীম্।
 
[4] আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
 
 
[5] ثُمَّ رَدَدنٰهُ أَسفَلَ سٰفِلينَ
 
[5] ছুম্মা রদাদ্না-হু আস্ফালা সা-ফিলীন।
 
[5] অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে।
 
 
[6] إِلَّا الَّذينَ ءامَنوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُم أَجرٌ غَيرُ مَمنونٍ
 
[6] ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূ অ‘আমিলুছ্ ছোয়া-লিহা-তি ফালাহুম্ আজরুন্ গইরু মাম্নূন্।
 
[6] কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার।
 
 
[7] فَما يُكَذِّبُكَ بَعدُ بِالدّينِ
 
[7] ফামা- ইয়ুকায্যিবুকা বা’দু বিদ্দীন্।
 
[7] অতঃপর কেন তুমি অবিশ্বাস করছ কেয়ামতকে?
 
 
 
 
 
 
[8] أَلَيسَ اللَّهُ بِأَحكَمِ الحٰكِمينَ
 
 
[8] আলাইসাল্লা-হু বিআহ্কামিল্ হা-কিমীন্।
 
[8] আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্টতম বিচারক নন?
 

সূরা তীন এর তাফসীর 

 
আল্লাহ অত্র সূরায় তীন, যয়তুন, তূর পাহাড় ও মক্কা নগরীর শপথ করে বলছেন যে, তিনি মানুষকে সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন।
 
(১) وَالتِّيْنِ وَالزَّيْتُوْنِ ‘শপথ ডুমুর ও যয়তূন বৃক্ষের’।
 
"আল্লাহ এখানে তীন ও যয়তূনের কসম করেছেন এর অধিক উপকারিতার জন্যে এবং আরবদের নিকট এ দু’টি বৃক্ষের ব্যাপক পরিচিতির কারণে।"
 
> হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আববাস, ইকরিমা, মুজাহিদ প্রমুখ বিদ্বান বলেন যে, هو تينكم الذى تأكلون وزيتونكم الذى تعصرون منه الزيت- ‘এটা হ’ল ঐ তীন বা ডুমুর যা তোমরা খেয়ে থাক এবং ঐ যয়তূন বৃক্ষ যা থেকে তোমরা তেল বের করে থাক’ (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। মুফাসসিরগণ তীন ও যয়তূনের বহু কাল্পনিক অর্থ বলেছেন। অথচ প্রকাশ্য অর্থ থেকে দূরতম অর্থে নিতে গেলে যে দলীল প্রয়োজন, তা সেখানে নেই। আল্লাহপাক যয়তূনকে উদাহরণরূপে ব্যবহার করে এর মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছেন। যেমন তিনি বলেন, يُوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُوْنَةٍ ‘প্রদীপটি প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যয়তূন বৃক্ষের তৈল দ্বারা’ (নূর ২৪/৩৫)।
 
 
 
> আল্লাহ পাক তীন ও যয়তূনের শপথ করার মাধ্যমে এই দু’টি বৃক্ষের শ্রেষ্ঠত্ব ও কল্যাণকারিতার প্রতি বান্দার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ডুমুর ও যয়তূন তৈল তথা এ দু’টি বৃক্ষের উপকারিতাসমূহ এবং রোগ নিরাময় ক্ষমতা অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় অনেক বেশী বলে আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ আবিষ্কারে দেখা গেছে যে, পৃথিবীর প্রথম কৃষিকাজ শুরু হয় ফিলিস্তীন ভূখন্ডে এবং সে কৃষিজ বৃক্ষ ছিল তীন বা ডুমুর গাছ। সম্প্রতি ফিলিস্তীনের মাটির তলে শুকনা তীন ফলের যে ফসিল পাওয়া গেছে, তা দশ হাযার বছর পূর্বেকার। মানুষের বসবাস ও জীবনযাত্রা তখন থেকেই পৃথিবীতে শুরু হয়েছে। হিসাবে দেখা গেছে যে, পৃথিবীতে আদম (আঃ)-এর আগমন ঘটেছিল দশ হাযার বছর পূর্বে। তিনি যে তীন বৃক্ষের প্রথম আবাদ করেছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল বর্তমান যুগে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে। হয়ত ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী প্রকাশিত হবে।
 
> দ্বিতীয় আরেকটি বিষয়ের ইঙ্গিত এতে রয়েছে যে, তীন ও যয়তূন যেখানে প্রথম ও বেশী পরিমাণ উৎপন্ন হয়, সেই ফিলিস্তীনের বা সিরিয়ার মাটিতে মানব সভ্যতার প্রথম উন্মেষ ঘটেছিল। বলা চলে যে, আদম থেকে ঈসা (আঃ) পর্যন্ত প্রায় সকল প্রধান নবীর আগমন ও বাসস্থান শাম ও তার আশপাশ এলাকাতেই ছিল। বিশেষ করে বনু ইস্রাঈলের সর্বশেষ রাসূল হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম বায়তুল মুক্বাদ্দাস এলাকাতেই হয়েছিল। অতএব তীন ও যয়তূনের শপথ করে আল্লাহ ফিলিস্তীন ভূখন্ডের উচ্চ মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আল্লাহ বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও তার আশপাশ তথা শাম অঞ্চলকে বরকতমন্ডিত বলে ঘোষণা করেছেন (ইসরা ১৭/১)।
 
 
(২)  وَطُوْرِ سِيْنِيْنَ ‘শপথ সিনাইয়ের তূর পাহাড়ের’।
 
 
> তূর পাহাড়ের পাদদেশে হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহ কথা বলেন এবং তাঁকে নবুঅত প্রদান করেন। সেকারণ তূর পাহাড়ের এমন এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, যা পৃথিবীর কোন পাহাড়ের নেই। সিনাইকে আল্লাহ স্বয়ং الْوَادُ الْمُقَدَّسَةُ বা ‘পবিত্র উপত্যকা’ বলে ঘোষণা করেছেন (ত্বোয়াহা ২০/১২)। সে হিসাবে সিনাই উপত্যকার মর্যাদা অতীব উচ্চে। মুজাহিদ বলেন, সুরিয়ানী ভাষায় ‘সীনীন’ অর্থ ‘মুবারক’ বা পবিত্র। মুক্বাতিল ও কালবী বলেন, سنين كل جبل فيه شجر مُثْمِرٌ ‘ফলবন্ত বৃক্ষসমৃদ্ধ পাহাড়কে ‘সীনীন’ বলা হয়, যাকে নাবাত্বী (نبطى) ভাষায় ‘সীনা’ (سِيْنَاءَ) বলা হয়’। سِيْنِيْنَ -কে سِيْنَاء ও سَيْنَاء দু’ভাবে পড়া হয়েছে (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ বলেন, وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِن طُوْرِ سَيْنَاءَ تَنْبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْآكِلِيْنَ ‘এবং আমরা সৃষ্টি করেছি সেই বৃক্ষ, যা জন্মে সিনাই পাহাড়ে, যা আহারকারীদের জন্য তৈল ও ব্যঞ্জন উৎপন্ন করে’ (মুমিনূন ২৩/২০)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) পড়তেন وَطُوْرِ سِيْنَاءَ (কুরতুবী)।
 
(৩) وَهَذَا الْبَلَدِ الْأَمِيْنِ ‘শপথ এই নিরাপদ নগরীর’।
 
> অর্থাৎ মক্কা মু‘আযযামার শপথ। এই নগরীকে আল্লাহ ‘নিরাপদ’ বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন তিনি বলেন, أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَماً آمِناً وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ ‘তারা কি দেখেনা যে, আমরা (মক্কাকে) নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুষ্পার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপরে আক্রমণ করা হয়ে থাকে…’ (আনকাবূত ২৯/৬৭)।
 
> হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন আল্লাহর হুকুমে দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল ও তার মা হাজেরাকে মক্কার বিরানভূমিতে রেখে যান, তখন সেটাকে আবাদ করার জন্য ও শস্য-ফলাদি দ্বারা সমৃদ্ধ করার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেছিলেন (ইবরাহীম ১৪/৩৭)। অতঃপর সেই ভবিষ্যৎ নগরীকে ‘নিরাপদ’ ও শান্তিময় করার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেছিলেন (ইবরাহীম ১৪/৩৫; বাক্বারাহ ২/১২৬)। শুধু তাই নয়, উক্ত নগরীতে একজন রাসূল প্রেরণের জন্য তিনি ও পুত্র ইসমাঈল খাছভাবে দো‘আ করেছিলেন (বাক্বারাহ ২/১২৯)। ফলে আল্লাহপাক উক্ত নিরাপদ ও পবিত্র নগরীতে ইসমাঈল বংশের একমাত্র নবী এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে প্রেরণ করেন (জুম‘আ ৬২/২)। অতঃপর আল্লাহ মক্কার কুরায়েশদের নির্দেশ দেন, তারা যেন এই গৃহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর ইবাদত করে। তিনি বলেন, فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ، الَّذِيْ أَطْعَمَهُم مِّنْ جُوْعٍ وَّآمَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ- ‘অতএব তারা যেন এই গৃহের পালনকর্তার ইবাদত করে। যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি হ’তে নিরাপদ করেছেন’ (কুরায়েশ ১০৬/৩-৪)।
 
 
 
> লক্ষণীয় যে, চারটি বস্ত্তর শপথে আল্লাহ তিনজন শ্রেষ্ঠ রাসূলের পুণ্যস্মৃতিবাহী তিনটি পবিত্র স্থানকে বেছে নিয়েছেন। যেমন ‘তীন ও যয়তূন’ বলে বায়তুল মুক্বাদ্দাসকে ইঙ্গিত করেছেন, যা ছিল হযরত ঈসা (আঃ)-এর আবির্ভাবস্থল। ‘তূরে সীনীন’ বলে তূর পাহাড়কে বুঝানো হয়েছে, যেখানে তিনি হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেছিলেন ও তাঁকে ‘তাওরাত’ প্রদান করেছিলেন। অতঃপর ‘আল-বালাদুল আমীন’ বলে মক্কা মু‘আযযামাকে বুঝানো হয়েছে, যা ছিল সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্মস্থান ও কর্মস্থল এবং পিতা ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর স্মৃতিভূমি।
 
> ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আলোচ্য তিনটি আয়াতে তিনটি মহান ও পবিত্র স্থানের শপথ করা হয়েছে। যেখানে আল্লাহর নূর ও হেদায়াত প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখানে আল্লাহর তিনটি মহাগ্রন্থ তাওরাত, ইনজীল ও কুরআন নাযিল হয়েছে। যেমন তাওরাতে উক্ত তিনটি স্থান সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, جاء من طور سيناء وأشرق من ساعير واستعلن من جبال فاران ‘আল্লাহ তূর পাহাড় থেকে এলেন (যেখানে তিনি মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেন)। অতঃপর (বায়তুল মুক্বাদ্দাসের) ‘সাঈর’ পাহাড়ে চমকিত হলেন (যেখান থেকে তিনি ঈসা (আঃ)-কে প্রেরণ করলেন)। অতঃপর ‘ফারান’ অর্থাৎ মক্কার পাহাড় সমূহ থেকে ঘোষণা জারি করলেন (যেখান থেকে তিনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে প্রেরণ করেন)’।[2]
 
(৪) لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِيْ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ ‘অবশ্যই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম অবয়বে’।
 
> পূর্বোক্ত তিনটি আয়াতে বর্ণিত চারটি বস্ত্তর শপথের জওয়াব হিসাবে অত্র আয়াতটি নাযিল হয়েছে। এখানে মানুষকে সুন্দরতম দৈহিক কাঠামো ও সুসমন্বিত শক্ত-সমর্থ অবয়ব বিশিষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন আশরাফুল মাখলূক্বাতরূপে সৃষ্টির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনিই কেবল জানেন সৃষ্টিসেরা কে? তাই আল্লাহ শপথ করে বলছেন সর্বোত্তম অবয়বে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلاً- ‘নিশ্চয় আমরা আদম-সন্তানকে মর্যাদামন্ডিত করেছি। আমরা তাদেরকে স্থলে ও পানিতে চলাচলের বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি এবং তাদেরকে আমাদের অনেক সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)।
 
 
 
> মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি দু’দিক দিয়ে বিবেচনাযোগ্য। এক- সুন্দরতম অবয়ব, উন্নতরুচির খাদ্যাভ্যাস এবং কামনা-বাসনা ও বুদ্ধি-চেতনার দিক দিয়ে। দুই- ঈমান ও সৎকর্মশীলতার দিক দিয়ে।
 
> প্রথমোক্ত দিক দিয়ে মানুষ সৃষ্টিগতভাবে অন্যান্য প্রাণীকুল ও ফেরেশতাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ। প্রাণীকুলের মধ্যে কামনা-বাসনা আছে, কিন্তু বুদ্ধি-চেতনা নেই। ফেরেশতাদের মধ্যে বুদ্ধি-চেতনা আছে, কিন্তু কামনা-বাসনা নেই। একমাত্র মানুষের মধ্যেই দু’টি বস্ত্ত একত্রে আছে। সে তার বুদ্ধি-চেতনার সাহায্যে স্বীয় কামনা-বাসনাকে পরাভূত করে এবং এভাবে সে সকল সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
 
> দুই- ঈমান ও সৎকর্মশীলতার দিক দিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সবার উপরে নির্ধারিত। কিন্তু কাফির-মুশরিক ও পাপিষ্ঠ মানুষ ফেরেশতার চাইতে উত্তম হওয়া দূরের কথা, এরা চতুষ্পদ জন্তুর চাইতে নিকৃষ্ট। এরা জ্ঞান থাকতেও বুঝে না, চোখ থাকতেও দেখেনা, কান থাকতেও শোনে না (আ‘রাফ ৭/১৭৯)। এর কারণ মানুষের সামনে যখন আল্লাহ প্রেরিত শাশ্বত সত্য কোন আদর্শ থাকে না, তখন নিজের সীমিত জ্ঞান নিয়ে খেয়াল-খুশীমত চলতে গিয়ে সে পদে পদে হোঁচট খায়। নিজের আবেগ-অনুভূতির কাছে সর্বদা সে পরাজিত হয়। অবশেষে শয়তানী ফাঁদে পড়ে পশুত্বের নিম্নতম স্তরে নেমে যায়। এমনকি গর্ব ও অহংকারে স্ফীত হয়ে সে নিজেকেই একসময় ‘রব’ বলে দাবী করে বসে। ফেরাঊন ছিল যার বাস্তব নমুনা’ (নাযে‘আত ৭৯/২৪)।
 
> যুগে যুগে ফেরাঊনের অনুসারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে জেঁকে বসে আছে। এরাই মানবতার সর্বোচ্চ স্তর হ’তে পশুত্বের সর্বনিম্ন স্তরে পতিত হয়েছে। বলা চলে যে, এইরূপ লোকদের নেতৃত্বের কারণেই বিশ্বসমাজ সর্বদা কলুষিত হয়। ফলে একদিন আসবে চূড়ান্ত ধ্বংস- ক্বিয়ামত।
 
> এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মানুষ শুরু থেকেই সুন্দর অবয়ব বিশিষ্ট মানুষ ছিল। সে কখনোই বানর বা অন্য কিছু ছিল না। বস্ত্ততঃ কুরআনী সত্যের সামনে ডারউইনের বিবর্তনবাদের কাল্পনিক থিওরী একেবারেই অচল ও অগ্রহণযোগ্য।
 
(৫) ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِيْنَ ‘অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি সর্বনিম্ন স্তরে’। মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ তাকে জাহান্নামে ফিরিয়ে দিয়েছি। অর্থাৎ সর্বোত্তম অবয়ব ও সর্বোন্নত রুচি ও মর্যাদার অধিকারী হওয়ার পরেও আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য না করার ফলে মানুষ পশুত্বের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে যায় এবং জাহান্নামের খোরাক হয়।
 
> এ আয়াতের অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, দৈহিক ও জ্ঞানগত শক্তির পূর্ণতা লাভের পর মানুষকে আমরা বার্ধক্যের ন্যুব্জতা ও শীর্ণতা এবং জ্ঞানগত ত্রুটি ও স্মৃতিহীনতা ইত্যাদির মাধ্যমে নিকৃষ্টতর অবস্থার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। মানুষ শত চেষ্টা করেও তার যৌবনকে ধরে রাখতে পারে না এবং বার্ধক্যকে ঠেকাতে পারে না। অমনিভাবে শত চেষ্টা করেও সে তার মৃত্যু ও পুনরুত্থানকে এবং পাপাচারী যালেমরা জাহান্নামকে ঠেকাতে পারবে না।
 
(৬) إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ ‘তবে তারা ব্যতীত, যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে অবিচ্ছিন্ন পুরস্কার’।
 
> অর্থাৎ মানবতার সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে পতিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেনা ঐ ব্যক্তিগণ, যারা আল্লাহর উপরে ঈমান এনেছে এবং তাঁরই দেখানো পথে সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করেছে। যেমন সূরা আছরে আল্লাহ বলেন, وَالْعَصْر، إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ، إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ- ‘কালের শপথ! নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কেবলমাত্র তারা ব্যতীত, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করেছে’। ‘যারা পরস্পরকে হক-এর উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ছবরের উপদেশ দিয়েছে’।
 
فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ ‘তাদের জন্য রয়েছে অবিচ্ছিন্ন পুরস্কার’। غَيْرُ مَمْنُونٍ অর্থ غير مقطوع অবিচ্ছিন্ন বা অশেষ (ইবনু কাছীর)।
 
আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُواْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ تَجْرِيْ مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ- ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করেছে, তাদের পালনকর্তা তাদের পথ প্রদর্শন করবেন তাদের ঈমানের মাধ্যমে এমন নে‘মতপূর্ণ জান্নাতের দিকে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ’ (ইউনুস ১০/৯)।
 
> অর্থাৎ ঈমানই হ’ল মূল। ঈমান সঠিক হ’লে আমল ভাল হবে। আমল ত্রুটিপূর্ণ হ’লে বুঝতে হবে তার ঈমান ত্রুটিপূর্ণ ছিল। শিরকবিমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাস মানুষকে আল্লাহর আনুগত্যে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে এবং জীবনের চলার পথে তাকে পদস্খলন থেকে রক্ষা করে। যেমন হাযারো ঢেউয়ের মধ্যে নোঙর তার নৌকাকে শক্তভাবে ধরে রাখে।
 
তাওহীদ থাকলে ইত্তেবায়ে সুন্নাত থাকবেই। ইত্তেবায়ে সুন্নাত ব্যতীত স্রেফ আল্লাহতে বিশ্বাস জান্নাত লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। ইত্তেবা ব্যতীত তাওহীদের দাবী কপটতা বৈ কিছুই নয়। ঈমান ও আমল যার সঠিক হবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তার পুরস্কার অফুরন্ত ও অসীম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ بِمِثْلِ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا ‘যদি কেউ পীড়িত হয় বা সফরে থাকে, তা’হলে বাড়ীতে সুস্থ অবস্থায় সে যে নেক আমল করত, সেইরূপ ছওয়াব তার জন্য লেখা হবে’।[3] অর্থাৎ সুস্থ অবস্থার নেকী পীড়িত অবস্থায়ও জারি থাকবে। যদি তার মধ্যে ঐ নেকী উপার্জনের আকাংখা থাকে।
 
(৭) فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِالدِّينِ ‘অতঃপর এরপরেও কোন্ বস্ত্ত তোমাকে ক্বিয়ামত দিবসে মিথ্যারোপে প্ররোচিত করছে’?
 
فَمَا يُكَذِّبُكَ এর ما مصدرية হ’লে অর্থ হবে, فَمَا يَحْمِلُكَ عَلَى أَنْ تُكَذِّبَ بِالْبَعْثِ وَالْجَزَاءِ ‘কোন্ বস্ত্ত তোমাকে পুনরুত্থান ও বিচার দিবসে মিথ্যারোপে প্ররোচিত করেছে’? পক্ষান্তরে ما موصولة হ’লে অর্থ হবে, فَمَنْ يُكَذِّبُكَ أَيُّهَا الرَّسُولُ بَعْدَ هَذَا الْبَيَانِ بِالدِّينِ ‘বিচার দিবস সম্পর্কে এই বক্তব্যের পরে হে রাসূল! কে তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে’? অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি ও লয় প্রত্যক্ষ করার পরেও কে তাদের পুনরুত্থান ও বিচার করার ব্যাপারে আমার একচ্ছত্র ক্ষমতা বিষয়ে তোমার উপরে মিথ্যারোপ করবে? (কুরতুবী)। এতে অবিশ্বাসীদের প্রতি ধিক্কার ও বিস্ময় ব্যক্ত হয়েছে।
 
> অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, হে মানুষ! তোমার নিজের দেহের উৎকৃষ্টতা ও নিকৃষ্টতা, তোমার কর্মের সফলতা ও বিফলতা, তোমার জীবনের উত্থান ও পতনের দৃশ্য স্বচক্ষে প্রতিনিয়ত দেখার পরেও কেন তুমি ক্বিয়ামতে অবিশ্বাস করছ? প্রতি রাতে নিদ্রাকালে তোমার মৃত্যু হচ্ছে। অতঃপর প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে তোমার ক্বিয়ামত হচ্ছে। এই নিদ্রা একদিন চিরনিদ্রায় পরিণত হবে। তোমার সেই নিদ্রা শেষে আবার তোমাকে উঠাবেন তিনি, যিনি তোমাকে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠাতেন। অতএব ক্বিয়ামতের দিন পুনরুত্থান এবং চূড়ান্ত হিসাব দানের জন্য দুনিয়াতেই প্রস্ত্ততি গ্রহণ কর। অহেতুক হঠকারিতা বশে ক্বিয়ামতে অবিশ্বাস করো না। দুনিয়ায় যেমন আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করছেন। ক্বিয়ামতের দিন তেমনি জা ‎হান্নামের দারোয়ান সরাসরি অহংকারী লোকদের জিজ্ঞেস করবে-
 
وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ آيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا؟ قَالُوْا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ- قِيْلَ ادْخُلُوْا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَا فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ-
 
> জাহান্নামের রক্ষীরা তাদের বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে কোন পয়গম্বর আসেননি? যিনি তোমাদের আজকের এ দিনের সম্মুখীন হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করতেন? তারা বলবে, হ্যাঁ। কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির হুকুমই বাস্তবায়িত হয়েছে’। ‘তখন তাদের বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা সমূহ দিয়ে প্রবেশ কর সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্য। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট’ (যুমার ৩৯/৭১-৭২)।
 
(৮) أَلَيْسَ اللهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِيْنَ ‘আল্লাহ কি সকল বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন’?
 
অর্থ حَقًّا اللهُ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রেষ্ঠ বিচারক’। এটি পূর্ববর্তী বাক্যের নিশ্চয়তাবোধক। أَلَيْسَ এখানে استفهام تقريرى বা ‘নিশ্চয়তাবোধক প্রশ্ন’ হিসাবে এসেছে।
 
> অর্থাৎ হে হঠকারী ব্যক্তিগণ! আল্লাহ কি শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? আর সেজন্যেই তো ক্বিয়ামত হবে। যাতে অহংকারী যালেমদের কাছ থেকে মযলূমদের পক্ষে আমি যথাযথ বদলা নিতে পারি। যালেমরা যুলুম করে পার পেয়ে যাবে, আর মযলূমরা কেবল মুখ বুঁজে যুলুম বরদাশত করে যাবে- তার কোন প্রতিদান তারা পাবে না, এটা তো ইনছাফ নয়। সেজন্য ক্বিয়ামত অবশ্যই হবে এবং ন্যায়বিচার অবশ্যই পাবে সকল মানুষ। অতএব আল্লাহ কি শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? জবাব, অবশ্যই তিনি শ্রেষ্ঠ বিচারক। এর মধ্যে যালিম, কাফির ও মুনাফিকদের প্রতি কঠোর ধমকি ও দুঃসংবাদ রয়েছে।
 
অত্র আয়াতের জওয়াবে بَلَى وَأَنَا عَلَى ذَلِكَ مِنَ الشَّاهِدِيْنَ (হ্যাঁ! নিশ্চয়ই আমি উক্ত বিষয়ে সাক্ষ্যদানকারীদের অন্যতম) বলার হাদীছটি যঈফ।
 

সূরা তীন বাংলা অনুবাদ সহ 

 
সূরা তীন বাংলা অনুবাদ সহ শুনতে চাইলে নিচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করে শুনতে পারবেন।
 
 
                সূরা তীন বাংলা অনুবাদ সহ
 
 

সূরা তীন তেলাওয়াত 

 
আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে সূরা তীন এর তেলাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তেলাওয়াত শুনে  শুনে আপনারা সূরা তীন শুদ্ধভাবে মুখস্ত করতে পারবেন।
 
 

 

 
 
 
 
Tag: সূরা তীন বাংলা উচ্চারণ, সূরা তীন বাংলা অনুবাদ, সূরা তীন, সূরা তীন এর তাফসীর, সূরা তীন বাংলা অনুবাদ সহ, সূরা তীন তেলাওয়াত, সূরা আত তীন।
No Previous Article No Next Article
Loading Ad...

More You Might Like

Comments

Leave a Comment

Comments (0)

Loading Ad...

Need Help with Your Studies?

Our team is here to guide you with academic support, resources, and expert advice. Reach out anytime and get the help you need to succeed.

Have questions? Contact Us anytime.

Get 15,000+ Articles

Get the latest notice guides and exclusive insights delivered to your inbox every week.

By subscribing, you agree to our Privacy Policy.